খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে

খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে: জীবন নিয়ে আশা রাখার (৫টি কারণ)

মানুষের জীবনে খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে, সময় সবসময় একরকম যায় না। মানুষ পরিবর্তনশীল একটা জীব। আমরা ভালো খারাপ সংমিশ্রণে সময় ব্যায় করে থাকে। কোন সময় আমাদের জন্য ভালো আর কোন সময় আমাদের জন্য খার যাচ্ছে আমরা তা অনুধাবণ করতে পারি না।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কখনও না কখনও খারাপ সময় এসে হানা দিয়েছে।ওই হানা দেওয়ার সময় গুলো অনেক কঠিন ও হতাশাজনক ভাবে পার করতে হয়েছে সবার। আলো আছে বলে অন্ধকারকে আমরা এতো ভয় পায় না, যদি আলো না থাকলে অন্ধকারকে আমরা ভয় পেতাম।

এই ব্লগপোস্টে আমরা আলোচনা করবো খারাপ সময়ে ও নিজেকে কি করে শক্ত রাখা যায়।

খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে হাদিস?

মুসলিমদের জন্য কুরআন হলো আলোর পথ, কুরআন আমাদেরকে ইহকাল এবং পরকাল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেয়। হাদিস হলো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছে সবগুলোই হাদিস। কুরআন বর্ণিত আছে,

নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি। [সুরা ইনশিরাঃ ৫-৬]

কষ্টের পরেই আছে সুখ এটা আমরা সবাই জানি।আপনিও হয়তো কষ্ট এর পর স্বস্তি পেয়েছেন কোন না কোন একদিন।ছাত্রজীবনে আমরা রেজাল্ট এর জন্য শুধু কষ্ট করে গেছি, রেজাল্ট এর পর আমরা একটা শান্তি পাই যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারলে।

শুধু ছাত্রজীবনে না আমরা প্রতিনিয়ত কষ্ট করে যায় শান্তির জন্য। আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেছেন

আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন। [সুরা তালাক্ব]

কুরআন মজিদ আমাদের শেখায় দুনিয়ায় জীবন কি করে গঠন করলে আখিরাতে শান্তি পাওয়া যাবে।
দুনিয়াতে আপনি আল্লাহ দেওয়া বিধান মেনে চললে কিয়ামত এর দিনে আপনাকে জান্নাত প্রধান করা হবে এটা হলো প্রত্যেক মুসলিম এর পাওয়া বা আশা। আরেকটি সূরায় আল্লাহ বলেছেন

(জান্নাতে) আমি তাদের অন্তর থেকে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিবো। [সুরা আ’রাফ]

এক হাদিসে বর্ণনায় এসেছে যে,

“আল্লাহর সাহায্য কষ্ট অনুপাতে আকাশ হতে অবতীর্ণ হয় এবং তা ধৈর্য ও সহনশীলতা অনুযায়ী আসমান হতে নাযিল হয়।

খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে

খারাপ সময়ের মধ্যেও আশা হারানো যাবে না কারণ জীবনের প্রতিটি খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে। এটি শুধু বিশ্বাসের কথা নয়, এটি বাস্তবতা।

আপনার জীবনের অতীত থেকে লক্ষ্য করে দেখুন, আপনার জীবনে খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসেনি এমন কোনদিন হয়েছে। আমাদের জীবন হলো পরিবেশের ইকোসিস্টেম এর মতো।খারাপ সময়ের পরে ভালো সময় আসে, কীভাবে আমরা এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারি।

আরও পড়তে পারেন:

নিজের পথ নিজেকে তৈরি করতে হয়: সাফল্যের জন্য নিজের রাস্তা নিজে তৈরি করুন

১০ টি ভালো অভ্যাস আপনাকে সফল হতে সাহায্যে করবে

জীবনের চক্র:

অন্ধকারের পর আলো আসে, আমাদের জীবন হলো উত্থান-পতনের এক চক্র। এটি কখনও একরকম থাকে না।কেউ কল্পনা করতে পেরেছে শেখ হাসিনা এতো তাড়াতাড়ি পতন হবে। এটি হলো একটা ইকো সিস্টেম, সময় আপনাকে বনের রাজা বানাবে আবার আপনাকে সেই রাজা থেকে ছুড়ে ফেলতে ও ভাববে না।

প্রাচীন ভারতীয় এক দর্শনিকের মতো, জীবনের কঠিন সময়গুলো আমাদের কে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্যে করে এবং ভালো সময়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখে।

রাতের পর দিন আসে, তেমনি খারাপ সময়ের পর ভালো সময়ও আসে। এটি প্রকৃতির নিয়ম। বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব থমাস এডিসন, স্টিভ জবস—তাদের জীবনে ব্যর্থতার পরেই এসেছে সাফল্য। তারা যদি ব্যর্থতার পর থেমো যেতো তাহলে আজকে আলোর বাতি আমরা দেখতে পেতাম না, আজকে আমরা আইফোন এর মতো স্মার্ট ফোনের আবিষ্কার এর ছোঁয়া পেতাম না।

খারাপ সময়ের মূল্যবান শিক্ষা:

আমাদের আরেকটি সমস্যা হলো আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি না।আমাদের অভ্যাস বেশি খারাপ আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে পারি না। দেওয়ালের এই পিঠ আর ওই পিঠ দুটোই থাকে।খারাপ সময় যখন আসবে, তখনের শিক্ষা গ্রহণ করলে আমাদের তেমন কষ্টে পরতে হ না।খারাপ সময়ে আপনার থেকে শিক্ষা নিতে হবে, এই শিক্ষাটা আপনার থেকে খাতা এবং কলমে নোট করে রাখতে হবে।

বিল গেটস এতো সফল কেন কিংবা জ্যাক মা তারা এতো সফল কেন। ওরা অতীত থেকে কি শিক্ষা গ্রহণ করেছে।সফল মানুষেরা সবসময়ই তাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো ফলাফল তৈরি করেছে।খারাপ সময় হচ্ছে আপনার জীবনের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষাকাল, যা আপনার ভবিষ্যতের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ বড় ভূমিকা রাখবে।

কিভাবে খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠা যায়:

খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠতে সময়ের ব্যাপার।মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরী করা, নিজের স্বাস্থ্য এর প্রতি যত্নশীল হওয়া। নিয়মিত খাবার খাওয়া, গোসল করা, পরিবারকে সময় দেওয়া ইত্যাদি এসব কাজ করে নিজেকে ব্যাস্ত রাখা।

যদি সময় পান তাহলে ভালো একটা জায়গা ঘুরতে যাওয়া, ঘুরলে মানুষের মন পরিষ্কার হয় এবং নতুন কিছু শিখতে পারবেন ৭ দিনের একটা ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারেন ওই ভ্রমণে গিয়ে নিজের, রুটিন টা পরিবর্তন করে ফেলুন। নিজের রুটিন পরিবর্তন এর জন্য আপনাকে বিভিন্ন রকমের খাদ্যেবাস, ঘুমের পরিবর্তন এবং শরীরের যত্ন নিতে হতে পারে।

মেডিটেশন করতে পারেন, এটা করলে আপনার ফোকাসে বাড়বে।ফোকাস বাড়ার জন্য আপনাকে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে মেডিটেশন। এই ভিডিও টা দেখতে পারেন

আপনি মুসলিম হলে আপনি ৩-৭ দিনের তাবলীগ সফরে যেতে পারেন এটা থেকে আপনি অনেক গুণ উপকৃত হবেন। এগুলো আপনার ভ্রমণের চাইতে উপকারী, মেডিটেশন এর চাইতেও অনেকগুণ উপকার আসবে আপনার খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য।

ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করা:

খারাপ সময় চলে যাবে ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন।আলো তখনই আসে রাত ধীরে ধীরে যখন চলে যায়।ঠিক একই ভাবে খারাপ সময়ও চলে যাবে আপনাকে আলোর দেখা দিবে ধীরে ধীরে। খারাপ সময়ে আপনি যে ভালো কাজগুলো করেছেন সেগুলো রেগুলার করতে চেষ্টা করুন।খারাপ সময় চলে গেছে তার মানে এই না আর কখনো আপনার খারাপ সময় আসবে না।

আপনি ডেইলি রুটিন করে রাখুন, ভবিষ্যতে যদি এমন পরিস্থিতিতে পরতে হয় তাহলে আপনাকে আগের করা হ্যাবিট বা অভ্যাস গুলো আপনার প্রয়োজন হবে।

খারাপ সময়ে আপনি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না।সবসময় মানুষের সাথে ভালো ব্যাবহার করুন। ভালো ব্যাবহার মানুষকে অনেকদিন পযন্ত মনে রাখে। আপনি ইতিমধ্যেই একটা কঠিন সময় পার করে এসেছেন। কঠিন সময়ে আপনাকে যারা সাপোর্ট এবং সহোযোগিতা করেছে তাদের ভুলবেন না। তাদেরকে সবসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

আশাবাদী থাকা:

সময় খারাপ যেতে পারে, সময় খারাপ যাচ্ছে এই না যে আপনি মানুষ হিসাবে খারাপ যাচ্ছেন।খারাপ সময়ের পর ভালো সময়ের জন্য আশাবাদী হওয়া উচিত।

কঠিন সময় মোকাবিলা করার সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র হলো নিজের প্রতি আশাবাদী থাকা। আশাবাদ আমাদের মনোবল বাড়িয়ে দেয় এবং কঠিন সময়েও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

কারো থেকে কোন কিছু পাওয়ার আশা ছেড়ে দিন, কারও থেকে আপনি কোন কিছু পাওয়ার আশা করবেন না। এটি হলো পুরোই বোকামি। পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা করে থাকে তারা এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে যারা নিজের প্রতি আশাবাদী তারা কম মানসিক চাপ অনুভব করে থাকে।

আপনার জীবনে আশাবাদী হওয়া উচিত, যতই ব্যর্থতা আসুক না কেন আপনি কখনো হাল ছেড়ে দিবেন না। আপনার লক্ষ্য পৌঁছাতে হলে আপনাকে আশাবাদী হতে হবে।

আপনাদের মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। শেয়ার করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন আপনি নিজেকে মুক্ত খোলস থেকে বাহির করে অন্য লেবেলে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *